বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০১৫

বাংলাদেশে এখন উন্নত মানের বনসাই কালচার চালু রয়েছে, এসব বিদেশেও রপ্তানি করা যায় ৷

বনসাই কি?
বনসাই এর পারিভাষিক অর্থ জীবন্ত ভাস্কর্য৷ বনসাই এর ইতিহাস বহু পুরানো ।ধারণা করা হয় প্রায় ২০০০ বৎসর পূর্বে চীনে এর শুরু হয় এবং পরবর্তীতে চীনের অন্যান্য অঞ্চল, জাপান, কোরিয়া ও ভিয়েতনামে বিস্তৃতি লাভ করে । বাংলাদেশেও এখন উন্নত মানের বনসাই কালচার চালু রয়েছে এখন এসব বিদেশেও রপ্তানি করা যায় ৷
বনসাই বলতে বুঝায় বৃক্ষ জাতীয় যে কোন গাছকে (ফলজ ও বনজ) তার আকৃতি ঠিক রেখে সেগুলোর নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যসহ বিভিন্ন প্রকার টবে ধারণ করা৷ বনসাই চাষের মাধ্যমে অল্প পরিসরে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করা যায়৷ বড় গাছকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় যত্ন করে নিদিষ্ঠ আকার প্রদান করা বা ছোট করার নাম বনসাই। যেমন: বটবৃক্ষের মতো বড় গাছকে সুদৃশ্য মাটির টবে লাগানো হয়। এবং নানা রকম শৈল্পিক কার্যক্রমে তাকে বাড়তে দেয়া হল না। কয়েক বৎসরের পরিচর্যায় ছোট্ট মাটির টবের বট গাছ পেল বামন বটের রূপ। কান্ড, ডাল-পালা, পাতা সবই পূর্ণাঙ্গ বটের মত, শুধু আকার আয়তনে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। বৃক্ষের সর্বত্র বয়সের চিহ্ন। এমনকি সরু সরু তরুলতাও ঝুলতে লাগলো, বটবৃক্ষের ডাল থেকে। এ রকম একটি টবে জন্মানো বটবৃক্ষ বাড়ির বারান্দায় কিংবা সুসজ্জিত ড্রয়িং রুমে রেখে দিলে কার না নয়ন জুড়াবে? এই যে আকার আয়তনে ছোট অথচ এর সবকিছুই জমিতে লাগানো বিশাল বৃক্ষর মত স্বাভাবিক মনমুগ্ধকর, নয়নলোভন রূপ-এরই নাম ‘বনসাই’!
বনসাই এর উদ্ভব চিন-এ হলেও এর প্রথম বিস্তার লাভ হয় জাপানে এমনকি বনসাই নাম করনও হয় জাপানে এবং ‘বনসাই’ শব্দ টিও জাপানী শব্দ। শত শত বছর ধরে জাপানীরা বনসাই সম্মন্ধে হাতে-কলমে চর্চা করে আসছে। বনসাই শিল্পে সারা বিশ্বে এখনো তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুন্ন রেখে চলছে। জাপানীদের অনেক পরিবার বংশগতভাবে এর চর্চা করে চলছে। যাহোক বনসাই বিষয়ে আমাদের দেশের খুব সীমিত সংখ্যক মানুষ জানলেও অধুনা অনুষ্ঠিত বৃক্ষমেলা ও বিভিন্ন নার্সারীতে এর উপস্থিতি সংস্কৃতি মনস্ক মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তকে বেশ আগ্রহী করে তুলেছে।
যাই হোক হয়তো এমন দিন বেশি দূরে নয় যে, শহর অঞ্চলের প্রতিটি সৌন্দর্যমনস্ক পরিবারের বারান্দায় কিংবা ড্রয়িংরুমে অন্ততঃ একটি বনসাই শোভা পাবে। সেক্ষেত্রে নিজে তৈরি না করলেও নার্সারী থেকে বিত্তবান ও সৌখিন লোকেরা কিনতে ভল করবে না।
 বনসাই অত্যন্ত দামী তরুশিল্প। বনসাই করা সময় সাপেক্ষ এবং এক মহান শিল্পকর্ম। এর জন্য সারা বছর ধরে পরিচর্যা করতে হয়। অনেকের মতে, বনসাই হলো এমন এক মহান শিল্পকর্ম যার জন্য দরকার কবির মত কল্পনাশক্তি, হস্তশিল্পীর মত সুদক্ষ হাতের কাজ, চিত্রশিল্পীর মত দৃষ্টির গভীরতা এবং অভিজ্ঞ মালীর মত চাষাবাদ সম্পর্কিত গভীর জ্ঞান। বনসাই এক অনন্য শিল্পকর্ম। তবে এ শিল্প সম্পুর্ণ জীবন্ত। অন্য প্রাণহীন শিল্পের সঙ্গে এটুকুই শুধু প্রভেদ।বনসাইয়ের দরদাম নির্ভর করে গাছের বয়স ও গঠনের ওপর। সর্বনিম্ন তিন হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকায় বনসাই ক্রয় করতে পারেন। তবে মোটামুটি ভালোমানের একটি বনসাইয়ের জন্য ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা বাজেট রাখতে পারেন। বিভিন্ন বনসাই প্রদর্শনী, কৃষিমেলা এমনকি বনসাই প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকেও আপনি বনসাই সংগ্রহ করতে পারেন।

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৭] :: গ্রাফটিং এর মাধ্যমে বনসাই চারা উৎপাদন।

গ্রাফটিং বীজ অথবা কাটিং হতে বনসাই তৈরি শুরু করা এবং পূর্বে থেকে জন্মানো উদ্ভিদ থেকে বনসাই তৈরি করা এ দুইয়ের মাঝে সংযোহ স্হাপন করে। গ্রাফটিং করা খুব কঠিন কাজ নয় তবে এতে দক্ষতার প্রয়োজন। আর এ দক্ষতা পর্যাপ্ত অনুশীলনের মাধ্যমে সহযেই অর্জন করা সম্ভব।
গ্রাফটিং এর জন্য উদ্ভিদকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১) স্টক উদ্ভিদঃ যে উদ্ভিদের মূলতন্ত্র বা কান্ডের সাথে অন্য উদ্ভিদের জোড়া লাগানো হবে তাকে স্টক উদ্ভিদ বলে।
২) সায়নঃ যে কাটিংটিকে স্টক উদ্ভিদের সাথে জেড়া লাগানো হবে তাকে বলে সায়ন।
যখন একটি গ্রাফটিং সম্পুর্ণ ভাবে সফল হয় তখন সায়টি স্টকের মূলতন্ত্রকে ভিত্তি করে নতুন উদ্ভিদে পরিনত হয়।
গ্রাফটিং এর মূলমন্ত্রঃ একটি সফল গ্রাফটিং এর জন্য স্টক ও সায়ন উভয়ের ক্যা্িবয়াম বলয়ের একত্রিকরন প্রয়োজন যা ছাড়া গ্রাফটিং সম্ভব না। এটিই হল গ্রাফটিং এর মূলমন্ত্র।
স্টক ও সায়ন এর ক্যাম্বিয়াম বলয় একত্রে
গ্রাফটিং এর জন্য দরকার একাগ্রতা চটপটে ও দ্রত হাত চালানোর অভ্যাস। আর নিয়মিত অধ্যায়নের মাধ্যমে তা সহযেই অর্জন করা যায়।
আমি এখানে আপনাদের সাথে “ভিনিয়ার এর গ্রাফটিং” পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। কারন এটি সব থেকে সহজ তম গ্রাফটিং পদ্ধতি গুলোর একটি। সেইসাথে যারা প্রথম বারের মত গ্রাফটিং করতে চান তাদের জন্য এ পদ্ধতি খুবই সহয ও বোধগম্য হবে বলে আসাকরি। 
কাজের ধারাঃ
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
১) আপনার নির্ধারিত সায়ান উদ্ভিদ
২) আপনার নির্ধারিত স্টক উদ্ভিদ (একই গোত্রের হলে ভালো হবে)
৩) প্রুনিং কাচি
৪) গ্রাফ্ট টেপ বা পলিথিন হলেও হবে ( তবে পলিথিন নিলে সুতা ও নিতে হবে)
৫) মোটা কাগজের তৈরি সাপোর্ট
গ্রাফটিং এ প্রয়োজনীয় উপকরন
কর্মপদ্ধতিঃ
  • প্রথমেই সায়ান উদ্ভিদ হতে পেনসিলের সমান পুরু সায়ান কেটে নিন ও সায়নের কাটা মাথাটি চেছেঁ মসৃন ও তির্যক করুন। নিচের চিত্রে A
  • এরপর আপনার স্টক উদ্ভিদের মাটি হতে সামান্য উপরে তির্যক ভাবে কেটে নিন।  নিচের চিত্রে B
  • এবার সায়নের কাটা মাথা ম্টকের তির্যক ভাবে কাটা মাথাতে এমন ভাবে স্থাপন করেন যাতে উভয়ের ক্যাম্বিয়াম বলয় পরস্পরের সংপর্ষে আশে। নিচের চিত্রে C
গ্রাফটিং এর ধাপ

  • এবার স্টকের সাথে সায়নকে প্রথমে কাগজের সাপোর্ট দিয়ে তারপর গ্রাফ্ট টেপের সাহায্যে বা পলিথিন ও সুতার সাহায্যে পেচিয়ে দিন।

কিছুদিনের মাঝেই সায়নের উপরীভাগ হতে নতুন কুরি গজাতে শুরু করবে।
গ্রাফটিং নিয়ে কিছু কথাঃ 
অন্যান্ন পদ্ধতির তুলনায় গ্রাফটিং যদিও কিছুটা ঝামেলার তবে এর কিছু বিশেষত্ব আছে।
যেসব উদ্ভিদে কাটিং হতে মূল গজায় না ও যাদের বীজ হতে সহযে চারা গজায় না বা গজাতে অনেক সময় লাগে তাদের গ্রাফংি করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ও সময় সাস্রয় হয়।
অথবা আপনার কাছে যদি কোন দূর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ থাকে তবে আপনি গ্রফটিং এর মাধ্যমে খুব সহয়ের তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেন।
সাধারনত একই ধরনের দুটি উদ্ভিদের মধ্যে গ্রাফটিং করা হয় যেমন পাইনের সাথে পাইনের। তবে আপনি চাইলে এক গাছের সাথে আরেক গাছেরও গ্রাফ্ট করতে পারেন।

আসুন নিজেই বানাই চমৎকার বনসাই [পর্ব-০৬] :: যেভাবে কাটিং হতে নতুন উদ্ভিদ তৈরি করবেন

কাটিং এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
১) প্রুনিং কাচি ( বা ধারালো ছুরি ও ব্যবহার করতে পারেন)
২) মূল গজানোর হরমোন। ( যেকোন নার্সারিতে পাবেন)
মূল গজানোর হরমোন দেখতে অনেকটা আঠার মত
৩) আপনার প্রস্তুতকৃত মাটি। কিভাবে মাটি রি করবেন তা ৪র্থপর্বে আলোচনা করেছি।
৪) বড় আকারের টব।
কাজের ধারাঃ
কাটিং এর জন্য খুব ধারালো চাকু বা প্রুনিং কাচি ব্যবহার করবেন। কারন কাটার যায়গা মসৃন হতে হবে।
  • নরম কাঠ বা অর্ধ নরম কাঠ কাটিং এর জন্য ৬ ইন্চি লম্বা করে কাটবেন এবং শক্ত কাঠ কাটিং এর জন্য ৬-৯ ইন্চি লম্বা করে কাটবেন।
  • কাটার সময় কান্ডের যে স্হান হতে কাটবেন সেখানে পাতা বা কুরির ঠিক নিচে সোজা করে কাটবেন ও কাটর যায়গা এবরোথেবরো করবেন না।
  • কাটিং এর নিচের অর্ধেক অংশ অর্থাৎ ৬ ইন্চির নিচের ৩ ইন্চি হতে পাতা ফেলে দিন।
  • কঠিন কাঠের জন্য কান্ডের মধ্যভাগ কেটে নেয়া উচিৎ এর শীর্ষ ভাগ একটি পাতা বা কুড়ির ঠিক নিচে তির্যক ভাবে কেটে নেবেন।
  • প্রতিটি কাটিং এর নিম্ন ভাগ মূল গজানোর হরমোনে ডুবিয়ে তারপর টবের মাটিতে লাগাবেন।
  • মূলগজানোর মাটি অর্থৎ টবের মাটিকে আগেই পানি দ্বারা ভিজিয়ে নিতে হবে।
  • কাটিং টবে লাগানোর কিছুদিন পর যখন দেখবেন আপনার কাটিং এ কোন কুড়ি বা পাতার নতুন বৃদ্ধি হয়েছে তখন বুঝতে হবে আপনার কাটিং হতে হয়তো মূল গজিয়েছে ।
  • প্লাস্টিকের বালতিতে লাগানো কাটিং
  • পরিশেষে যখন দেখবেন আপনার কাটিং ভালোভাবে বৃদ্ধি লাভ করছে তখন এটিকে সাতন্ত্র পাত্রে বা আপনার নির্ধারিত টবে লাগাতে পারেন।

বনসাই ট্রেনিং এর জন্য উদ্ভিদ উৎপাদন প্রক্রিয়া

বনসাই তৈরি জন্য উদ্ভিদ উৎপাদন বা সংগ্রহ তিন ভাবে করা যায়।
১) নিজে বীজ হতে চারা উৎপাদন।
২) কাটিং বা কলম পদ্ধতিতে চাড়া উৎপাদন।
৩) নার্সারী বা অন্যকোন স্হান হতে সরাসরি চারা সংগ্রহ করা।
আসলে বনসাই করার জন্য বীজ হতে নিজে উদ্ভিদ তৈরি করা টা অনেক আনন্দের কারন এতে আপনি একটি গাছ বীজ হতে তার সর্বচ্চো পরিনতি লাভ করা পর্যন্ত সকল আনন্দ উপভোহ করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে একটি সমস্যা থেকে যায় তা েহল বীজ হতে বনসাই করার উপযুক্ত চাড়া উৎপাদন করতে অনেক বেশি সময় (২-৪ বছর) লাগতে পারে। যা অসলে অনেক কষ্টকর। তবে এতে এক ধরনের আলাদা আনন্দ আছে। কিন্তু আজকার আমরা সবাই আসলে সময় নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকি ও যে কোন কাজ কম সময়ে করতে চাই। আর তা ছাড়াও বীজ হতে চাড়া উৎপাদন করলে তা অনেক সময় মাতৃ উদ্ভিদের গুনাবলী বহন করে না বা প্রয়োজনীয় আকারে পাওয়াও যায় না। তাই সময়, বনসাই এর প্রয়োজনীয় আকার, ও আপনাদের সুবিধার কথা ভেবে আমি এখানে ২ ও ৩ নং পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
 কাটিং বা কলম পদ্ধতিতে বনসাইঃ
পাইন ও কিছু কনিফার জাতীয় উদ্ভিদ ছাড়া বেশিভাগ বনসাই উদ্ভিদই কাটিং বা কলমের মাধ্যমে উৎপাদন করা যায়।
কাটিং বা কলম পদ্ধতির দুটি বিশেষ সুবিধা আছে তা হল....
ক) কাটিং হতে যে উদ্ভিদটি পাবেন তা দেখতে এবং তার গুনাগুন হুবহু মাতৃ উদ্ভিদের মত হবে। কিন্তু বীজ হতে প্রপ্ত উদ্ভিদ মাতৃ উদ্ভিদের মত না ও হতে পারে।
খ) বীজ হতে প্রপ্ত উদ্ভিদ বনসাই ট্রেনিং এর জন্য উপযোগী হতে অনেক সময় লাগবে যা আমি আগেই বলেছি। অপরদিকে কাটিং হতে প্রাপ্ত চারা তারথেকে কয়েকগুন কম সময়ে ট্রেনিং এর জন্য উপযুক্ত হবে।
কাঠের বয়স ও ধরনের উপর নির্ভর করে কাটিং কে ৩ টি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়ে থাকে এবং কিছু কিছু বৃক্ষ ও গুল্ম হতে ৩ টি পদ্ধতিতেই চাড়া উৎপাদন করা যায়।
চলুন দেখেনিই কোন ধরনের কাঠ কখন কাটিং এর জন্য উপযুক্ত
নরম কাঠঃ যেসব গাছের কাঠ নরম তাদের কাটিং এর জন্য উপযুক্ত সময় হল বসন্তের শেষ বা গৃষ্ম কাল। এসব গাছের শেষ প্রান্ত রসালো ও নমনীয় কিন্তু জোরে বাকালে সেটি ভেঙ্গে যায়। নরম কাঠের কাটিং হতে দ্রুত ও আল্প সময়ে মূল গজায়। কিন্তু কাটিং এর সময় এদের কান্ডের চারপাশে আদ্র পরিবেশ বজায় রাখতে হয়। এবং লক্ষ রাখতে হয় কান্ডে যেন পাতা থাকে। এটিতে মূল গজানোর সময় যেন ঢলে না পড়ে ও মরে না যায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হয়।
অর্ধকঠিন কাঠঃ যেসব গাছের কাঠ অর্ধ কঠিন অর্থাৎ একেবারে শক্ত না আবার নরম ও নয় তাদের অর্ধকঠিন কাঠের বৃক্ষে বলে। শরতের শেষে যখন কান্ড তার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি শেষ করে নতুন করে পরিনত হয় তখন অর্ধ কঠিন কাঠ কাটিং েএর জন্য বেশি উপযুক্ত। । যেসব গাছের কান্য হতে অর্ধ কঠিন কাঠের কাটিং তৈরি করা হয় তারকান্ডটি যেন যেন যতেষ্ঠ দৃঢ় হয় এবং যাতে জোরে বাঁকা করলে এটি পট করে ভেঙ্গে না যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। যেসব গছে সূচাকৃতি ও প্রসস্ত পাতা থাকে তাদের অর্ধ কঠিন কাঠ কাটিং হতে ভালো মানের চাড়া জন্মায়।
কঠিন কাঠঃ যেকোন গাছের পরিনত ও পূরনো কান্ড সাধারনত কঠিন কাঠ হিসাবে বিবেচিত হয়। অনেক পত্রঝড়া উদ্ভিদ শরতে অথবা শীতের শেষে যখন তার পাতা ঝড়ে যায় তখন এর কান্ড হতে কাটিং তৈরি করলে খুব দ্রুত এদের মূল গজায়।
নিচের ছবিটা দেখুন আশাকরি কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন। ( আমার মোবাইলের ক্যামেরা ভালো নয়)

টব সংগ্রহ ও টবের মাটি তৈরি

  • প্রথম অবস্থায় সহজে পাওয়া যায় এবং দামেও সস্তা এমন টবই ভাল।
  • টবের উচ্চতা হবে ১০ সেঃ মিঃ এবং মুখের ঘের হবে ১৫ সেঃ মিঃ। তবে টবের আকৃতি পরিবর্তনশীল হতে পারে। উল্লেখিত আকারের টব বাজারে প্রচুর পাওয়া যায়।
  • মাটির টব ব্যবহারের আগে তা ২৫- ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে।
  • তলদেশে প্রতি ১.০৫ সেঃ মিঃ ব্যাসের জন্য একটি করে ছিদ্র থাকা চাই। অন্যথায় পানি নিকাশের সমস্যা দেখা দেবে, যা গাছের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
  • ছিদ্রগুলো টব মাটি ভর্তি করার সময় ভাঙ্গা হাড়ির টুকরা দিয়ে এমভাবে ঢেকে দিতে হবে যেন নীচে সামান্য ফাঁকা থাকে। এর উপর মাপ মত নাইলনের জাল বিছিয়ে তারপর নিয়মানুযায়ী মাটি দিয়ে টব ভর্তি করা হয়।
  • প্রথম অবস্থায় টবকে দর্শনীয় করার তেমন প্রয়োজন নেই। পরবর্তীকালে নিজের পছন্দমত সুর্দৃশ্য পোড়ামাটির টব বা নকশা করা চীনামাটির টব ব্যবহার করা যায়।
    মাটির ও চিনা মাটির সুন্দর টব
এবারে চলুন দেখে নিই মাটি প্রস্তুত করনঃ
বনসাইতে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করে তাকে ছোট করে রাখতে হবে। এই ছোট রাখার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গাছকে পরিচর্যা ও খাবার দাবার দিতে হবে, যাতে গাছটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠে। প্রথমতঃ টবের মাটি এমন হবে যাতে মাটি অনেকক্ষণ ভেজা থাকবে অথচ অতিরিক্ত জল ধরে রাখবে না। এ জাতীয় মাটি জাপানে পাওয়া যায়। তবে আমাদের দেশে এ ধরনের মটি তৈরি করে নিতে হবে। মাটি তৈরি ও টব ভর্তির কার্যাবলী নিম্নরূপঃ
  • মাটি তৈরির মালমশলাঃ আধা পোড়া মাটি ৩ ভাগ, দো-আঁশমাটি ৩ ভাগ, পাতাপচা সার বা এক বছরের পুরনো নির্ভেজাল গোবর সার ২ ভাগ, বেশ রড় দানার বালি ২ ভাগ ।
  • ঐসব উপাদান ভালভাবে মিশিয়ে হালকাভাবে গুঁড়ো করে নিয়ে ২- ৪ দিন রোদে শুকাতে হবে। মাঝে মাঝে হাত দিয়ে উলট পালট করে দিতে হবে।
  • ৪ মিঃ মিঃ ব্যাসের চালুনী দিয়ে ঐ মাটি ছেঁকে নিতে হবে। চালুনীর উপরে পড়ে থাকা মাটি দিয়ে টবের তলদেশ ভর্তি করতে হবে যা ভিত্তিস্তরের মাটি হিসেবে বিবেচিত।
  • চালুনী থেকে বের হওয়া মাটিকে পুনরায় ৩ মিঃ মিঃ ব্যাসযুক্ত চালুনী দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। এবার উপরে আটকে থাকা মাটি দিয়ে টবের মধ্যাংশ এবং চালুনী থেকে ঝড়ের পড়া মাটি দিয়ে উপরের অংশ ভরাট করতে হবে।

একটি আদর্শ বনসাই উপাদানের যে প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলি থাকবে

ভাল মূল ভিত্তি আছে এমন গাছ। 
সুন্দর Trunk-base আছে। 
স্বাভাবিক সৌন্দর্য (Natural beauty) আছে। 
গাছের বাকলে বয়সের ছাপ আছে।
  •  মূল কান্ডে কোন দাগ থাকবে না।
  •  মূল কাণ্ডের সুন্দর Taper থাকবে।
  •  প্রচুর ডালপালা আছে এবং ডালগুলিতে প্রচুর পাতা আছে।
  •  গাছে পোকার আক্রমন থাকবে না।
  • গাছ একেবারে সু বা রোগা হবে না।
  • প্রকৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে টিকে থাকা কষ্ট সহিঞ্চু গাছ।
  • যাদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে অথচ তেমন বাড় হয়নি।
উপরের বৈশিষ্ট সম্বলিত বৃক্ষ সংগ্রহ করতে পারলে আপনি একটি সুন্দর বনসাই বৃক্ষ তৈরি করতে পারবেন বলে আমাকরি।

বনসাই এর প্রকারভেদ চমৎকার সব ছবি সহ

এবার আসুন যানি আকৃতির উপর ভিত্তি করে বনসাই কে কত ভাগে ভাগ করা যায়
আকৃতির উপর ভিত্তি করে মূলত বনসাই বিভিন্ন প্রকার হয়। তবে প্রধানত ১১ ধরনের বনসাই এর চাহিদা ব্যাপক এগুলো হলঃ
১। টুইনট্রাংক বনসাইঃ বনসাই বৃক্ষ টবের উপর বা বৃক্ষের গোড়া হতে দুটি কান্ডের সৃষ্টি করলে তাকে টুইনট্রাংক বনসাই বলা হয়। নিচের চিত্র দেখুন

২। ট্রিপল ট্রাংক বনসাইঃ বনসাই বৃক্ষ টবের উপর বা বৃক্ষের গোড়া হতে তিনটি কান্ডের সৃষ্টি করলে তাকে ট্রিপল ট্রাংক বনসাই বলা হয়। নিচের চিত্র দেখুন
ট্রিপলট্রাংক বনসাই
৩। মাল্টিট্রাংক বনসাইঃ বনসাই বৃক্ষ টবের উপর বা বৃক্ষের গোড়া হতে তিনটির বেশি কান্ডের সৃষ্টি করলে তাকে মাল্টিট্রাংক বনসাই বলা হয়। নিচের চিত্র দেখুন
মাল্টিট্রাংক
৪। ডেড উড বনসাইঃ এক্ষেত্রে বনসাই এর পাতা সবুজ হলেও কান্ড মড়া কান্ডের ন্যায় সাদা বা অন্য কোন মৃত বর্নের হয়ে থাকে। এরূপ বনসাই কে ডেড উড বনসাই বলে। চিত্র দেখুন

৫। ফরমাল বনসাইঃ সাধারন মানের যেসব বনসাই বানানো হয় সেগুলোকে ফরমাল বনসাই বলাহয়। ফরমাল বনসাই এর কান্ড সাধারনত সোজা হয়।
ফরমাল বনসাই
৬। এনফর্মাল বনসাইঃ ফরমাল ও এনফরমাল বনসাই প্রায় একই তবে এনফরমাল বনসাই এর কান্ড গুলোতে সাধারনত ভাজ থাকে..
এনফরমাল বনসাই
৭। লিটারেটি বনসাইঃ এধরনের বনসাই এ কান্ড সাধারনত সরু হয় এবং মাথার ভাজ থাকে ও সামান্য পরিমানে পত্রক দেখা যায়।
লিটারেটি বনসাই
৮। রুট এক্সপোজ বনসাইঃ এধরনের বনসাই তৈরির ক্ষেত্রে সাধারনত শিকরের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এক্ষেত্রে গাছের প্রায় অর্ধেক অংশে শিকর প্যাচানো অবস্থায় থাকে।
রুটএক্সপোজ
৯। রুট ওভার রকঃ এধরনের বনসায়েও মূলেন উপর বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। এধরনের বনসাইয়ে মুল কোন অবলম্বনে ঘড়ির কাটার দিকে প্যাচানো থাকে।

১০। সেমিচ্যাসিড বনসাইঃ এধরনের বনসাই এ বৃক্ষ প্রথমে টব হতে সামান্য উপরে উঠে আশে ও পরবর্তিতে তা এক পাশে হেলে গিয়ে নিচের দিকে নামতে থাকে অনেকটা কোন পাহাড়ের ঢালে যে ভাবে গাছ নিচের দিকে নেমে আসে।

১১। উইন্ডস্টেপ বনসাইঃ বড় ধরনের বায়ু প্রবাহ বা ঝড়ের মধ্যে পড়লে সমগ্র বৃক্ষ যেমন বাতাসের ধাক্কায় বাতাসের দিকে হেলে যায় ঠিক তেমন গঠনের বনসাইকে উইন্ডস্টেপ বনসাই বলে।